দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

Psychology

দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

এখনকার সময়ের দাম্পত্য সম্পর্কে বিচ্ছেদের কত শতাংশ বেড়েছে ও কেন বেড়ে যাচ্ছে – তা নিয়ে যতটা তর্ক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, ততটাই কম আলোচিত বিষয় হচ্ছে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দিক থেকে কোন ধরণের পরিবর্তণ হওয়া উচিত।

প্রথমেই একটু আলোচনা করা যাক যে একটি দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য পারিবারিক দায়বদ্ধতা কেন আছে এবং কি করনীয় ?

ফ্যামিলি থ্যারাপিস্ট মারে বোয়েন (১৯৯০) একটি পরিবারকে একটি আবেগীয় উপাদান (ইউনিট) হিসেবে দেখেছেন। যেখানে তিনি বলছেন যে একটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যর চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, আচরণেকে কেন্দ্র করে পরিবারের অভ্যন্তরীণ কাঠামো বেড়ে উঠে। এখানে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের আচরণের উপর প্রভাব ফেলে এবং তার উপর ভিত্তি করেই যোগাযোগ করে। তাই খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে একটি দম্পতি সম্পর্ক কেমন হবে, তা পরিবারের অন্য সদস্যদের আচরণের সাথেও সম্পৃক্ত।

একটি পরিবারের মানসিক অবস্থা কিভাবে কাজ করে, তা বুঝতে পারলে সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন উপায় ও কার্যকর বিকল্প উপায় বের করা সম্ভব। সম্পর্কের মধ্যকার পারস্পরিক চাওয়া পাওয়া কতটুকু বাস্তব সম্মত এবং তার উপর ভিত্তি করে নিজেদের আচরণ কতটুকু নিয়ন্ত্রিত তা বোঝা জরুরী।

এবার দম্পতি হিসেবে কি করা যেতে পারে? জনপ্রিয় কাপল থেরাপিস্ট ডাঃ জন গটম্যান ১৯৯৮ সালে একটি দম্পতির ৪ ধরণের আচরণকে সম্পর্কের অমাবস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

১। সমালোচনা

সঙ্গীর সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে তার সম্পর্কে তীব্র নেতিবাচক মন্তব্য করা। যেমনঃ “ও তো কিছুই পারে না, জীবনেও কোন কাজ ঠিক মতো করতে পারবে না”। অপরের সমালোচনা করলেই সম্পর্ক এখানেই শেষ তেমনটা নয়। সঙ্গীর কোন আচরণ পরিবর্তন জরুরী মনে হলে তার আচরণ সম্পর্কে আপনার অনুভূতি বলুন এবং কথা বলার সময় শব্দ চয়নের দিকে লক্ষ্য রাখুন। ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে আলোচনা করুন।

২। অবজ্ঞা

অনেক সময় সঙ্গীর সাথে কথা বলার সময় অসম্মানজনক আচরণ করা হয় এবং সেই সাথে বিদ্রূপ করা, উপহাস করা, এবং অঙ্গভঙ্গী নকল করা বা শরীরের ভাষা ব্যবহার করা যেমন চোখের মাধ্যমে তাচ্ছিল্য দেখানো ইত্যাদি। মোট কথা অবজ্ঞার ছলে তুচ্ছ এবং মূল্যহীন বোধ করা হয়।

সঙ্গীর সম্বন্ধে দীর্ঘদিন নেতিবাচক চিন্তাভাবনার কারণে এভাবে মন্তব্য করা হয়-যা মাথায় আসে তা বলে একজন আরেকজন থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী অবজ্ঞা হল বিবাহ বিচ্ছেদের সবথেকে বড় কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

তাই দম্পতির নিজেদের মধ্যে একে অপরকে প্রশংসা করা, সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করার করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

৩। নিজের ভুল স্বীকার না করা

অনেক সময় সঙ্গী কোন কথা বলার সাথে সাথে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তর্ক জুড়ে দেওয়া হয়। সেই সাথে নিজেদের দোষ স্বীকার করতে না চাওয়া। ধরেই নেওয়া হয় যে সঙ্গী তাকে অপমান করার জন্য এই রকম মন্তব্য করছেন।

আসলেই কি ঘটেছে তা বোঝার চেষ্টা না করে আত্নরক্ষামূলক আচরণ শুধুমাত্র সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলবে।তাই সঙ্গীর খারাপ লাগার কারণ বোঝার চেষ্টা করুন এবং নিজের কোন ভুল থাকলে তা স্বীকার করুন।

৪। সম্পর্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াঃ এটা সাধারণত অবজ্ঞার প্রতিক্রিয়া। এই পরিস্থিতি তখনই ঘটে যখন ব্যক্তি সম্পর্কের আশা আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে যায়, ভবিষ্যতে ভালো সম্ভাবনা দেখতে পায় না। তারা সঙ্গীর সাথে সমস্যাগুলো সমাধানের পরিবর্তে এড়িয়ে যেতে চায়, যেমন কথা কমিয়ে দেওয়া, মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ইত্যাদি।

যদি দ্বন্দ্বের সময় মনে হয় যে আর কোন আলোচনা করার মনোভাব নেই । সেক্ষেত্রে আলোচনা বন্ধ করুন এবং সঙ্গীকে বিরতি নিতে বলা যেতে পারে, যেমন, “ঠিক আছে, আমি এই বিষয়ে কথা বলতে খুব রাগ লাগছে। ১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে শান্ত হয়ে আবার আলোচনা করছি”।এরপর এমন কিছু যা নিজেকে শান্ত করে যেমন একটি বই বা ম্যাগাজিন পড়া, হাঁটাহাঁটি, শারীরিক চর্চা, অর্থ্যাৎ এমন কিছু করা যা তীব্র আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে এবং পরবর্তীতে আবার গঠনমূলক আলোচনার চেষ্টা করা। খুব আবেগীয় অবস্থায় আলোচনার ফলাফল সাধারণত সন্তোষজনক হয় না।

আমরা অনেক সময়ে মনে করে নেই যে, সামাজিক ও আইনগত এই সম্পর্কের জন্য বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া এবং তার জন্য করণীয় তেমন কিছু নেই। আমেরিকার একটি গবেষণায় এসেছে যে, যেকোন বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় সম্পর্ক তৈরির প্রথম ১-২ বছর বা ৫-৭ বছরের সময়। অর্থ্যাৎ একটি সম্পর্ক নতুন কিংবা পুরোনো যেটাই হোক, সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া জরুরী। আমাদের সচেতন প্রচেষ্টা সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত রাখতে পারে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *