মানুষ কি টক্সিক হয়?
মানুষ কি টক্সিক হয়?
যখন কোন মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়, তাকে অপছন্দ করা হয় নাকি তার আচরণকে? অনেক সময় আমরা কথোপকথনের সময় ব্যক্তি ও আচরণকে আমরা মিলিয়ে ফেলি।
কখন একজন মানুষকে টক্সিক বলা হয়? ধরুন কেউ কোন কারণে আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করছে, আপনার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছেন না, তার নিজের নিয়মকানুনই কেই সত্য মনে করছেন, কিংবা আপনার তার সামনে গেলেই দমবন্ধ লাগে, আপনার হয়ত মনে হয় এই মানুষটার সামনে আপনার কোন চিন্তা বা ভালো লাগা প্রকাশ করার করার কোন সুযোগ নেই, মনে হয় যে সে শুধু আপনার খারাপটাই খুঁজে বেড়ায় মোটকথা যাকে মনে হয় সহ্যই করা যাচ্ছে না বা একসাথে থাকাই সম্ভব না আমরা তাকেই টক্সিক বলছি ।
যখন আমরা কাউকে ‘টক্সিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ফেলি, তখন সেই আচরণের কারণ বোঝার ভিন্ন কোন ব্যখ্যা থাকলে তা বোঝার মানসিক সহনশীলতা আমাদের মধ্যে কমতে থাকে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় “লেভেলিং”। লেবেলিং বলতে বুঝায় যখন আমরা কাউকে কোন নির্দিষ্ট একটি ধরনের মধ্যে ব্যাখ্যার করে বোঝার চেষ্টা করি। কিন্তু একজন মানুষ কি শুধু এই একটি ব্যাখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ধরুন আপনাকে কেউ যখন বলছেন যে আপনি অধৈর্য্যশীল। আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কি এই একটি ব্যাখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অবশ্যই নয়। তেমনি ভাবে একজন মানুষ শুধুই টক্সিক মানুষ নন। হতে পারে যে তার আচরণের কি কিছু কিছু বিষয় আপনার অপছন্দ।
কাউকে বোঝার ক্ষেত্রে তার আচরণের সাথে সাথে তার মূল্যবোধ বোঝাও জরুরি। যে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে আমাদের প্রতিটা মানুষের জীবন চিন্তা-ভাবনা আচরণ সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। ভিন্ন ভাবনার মানুষ হওয়ার ফলে ধরেই নেওয়া হয় যে অপর ব্যক্তি যা ভাবছেন ভুল ভাবছেন।
অনেকের ক্ষেত্রে ভাবনা তৈরি হয় যে, একদিনের ঘটনায় কি কাউকে টক্সিক নাম করণ করা হয়? অবশ্যই নয়। মানুষ কারো ব্যাপারে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তির ফলেও এই রকম নাম দেওয়া হয়। কিন্তু একজন মানুষকে নামকরণের পূর্বে তাকে সামগ্রিকভাবে বোঝা জরুরি।
নিজের প্রশ্ন করা করুন যে –
- আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তিনি সমসময় একই রকম ছিলেন?
- তার সম্পর্কে এমন ভাবনা আপনাকে কি কোন উপকার করছে
- আপনার ভাবনা পক্ষে কি কি যুক্তি আছে?
- আপনার ভাবনা বিপক্ষে কি কি যুক্তি আছে?
- আপনি ওই ব্যক্তির পরিস্থিতিতে কি করতেন?
উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর যদি মনে হয় যে আপনার চিন্তার যৌক্তিক ভিত্তি আছে সেক্ষেত্রে যা করা যেতে পারেঃ
১। বিশ্বাস করতে হবে যে মানুষ মাত্রই ভিন্ন। এই ভিন্নতার ফলেই আমরা একজন আরেকজনের সাথে সম্পৃক্ত ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। মানুষের এই ভিন্নতাকে মেনে নেওয়া জরুরি।
২। ভিন্ন মতাদর্শে মানুষ হলে বোঝার চেষ্টা করুন করুন যে তিনি কী বলতে চাইছেন। আপনাদের দুইপক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার কোন সুযোগ আছে কিনা। যদি এমন সুযোগ না থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার দ্বারা কতটুকু সম্ভব তা নির্ধারণ করুন এবং জানান।
৩। সেই সাথে ব্যক্তির প্রতি নেতিবাচক ভাবনা পরিবর্তন করে ব্যক্তির আচরণকে সমস্যা হিসেবে দেখুন। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির আচরণকে আলাদাভাবে দেখলে সমস্যা চক্রকে পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।
“টক্সিক” নামকরণ যে কোন পরিস্থিতির সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে বাধা দেয়। তাই একজন মানুষকে বুঝতে এই রকম লেবেলিং করার ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি।