এতক্ষণ যাবত আমরা আলোচনায় দেখলাম যে, অতীতে ঘটনা ও বর্তমানের যেকোন আকস্মিক ঘটনা আমাদের চিন্তা, আচরণ, অনুভূতি ও শারীরিক লক্ষণের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায়। কিন্তু আমরা অনেকেই নিজেদের বলতে থাকি “এই চিন্তা, আচরণ আমি পরিবর্তন করতে চাই” – কিন্তু কেন পারছি না!
এই পরিবর্তন না করতে পারার একটি বড় কারণ হচ্ছে “রুলস অফ লাইফ/ জীবনে নীতি বা সাধারণ বিশ্বাস ” অর্থ্যাৎ আপনি কিভাবে আপনার জীবনকে পরিচালিত করেন?
একজন ব্যাক্তির ওসিডি শুরু হচ্ছে তার অতীতের কোন একটা ঘটনা ও আকস্মিক ঘটনা থেকে! সেখান থেকে ব্যাক্তি জীবন নিয়ম তৈরি করছে যে “তিনি যদি নিয়ম গুলো ঠিক ভাবে পালন করতে পারেন – তাহলেই তিনি নিজেকে ও তার পরিবারকে নিরাপদে রাখতে পারবেন!” তাহলে এবার জেনে আসি জীবনের নীতি কিভাবে তৈরি হয়!
তাহলে বলা যেতে পারে, সময়ের সাথে সাথে আমরা জীবনের একটা নীতি বা সাধারন বিশ্বাস তৈরি করি। আমরা প্রাথমিক ভাবে এই বিশ্বাসগুলোকে স্বাভাবিক ভাবেই দেখি! কিন্তু ধীরে ধীরে এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত হয়। – কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হয় নানা ধরণের চিন্তা, মাথায় অস্বস্তিকর ছবি আসতে থাকে কিংবা বারবার সন্দেহ তৈরি হতে থাকে।
এখানে দেখতে পাচ্ছি, কোন একজন ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির অতীতে কোন অসুস্থতা, মৃত্যু বা অনেক বেশি তিরষ্কার না পরিষ্কারের নিয়ম নীতের অনুশীলন হয়তো করতেন। কিন্তু এই অতীত ঘটনা সব সময় সবার মধ্যে ওসিডি তৈরি করে না। কিন্তু দেখা যায়, তার হয়ত পরিবারের কেউ আকস্মিক ভাবে অসুস্থ হয়েছে, কোভিড বা নিজেই কোন কারণে তীব্র অসুস্থতার সম্মূক্ষীন হয়েছে – সেখান থেকে তিনি তার ছোটবেলা থেকে শেখা জীবনের নীতি/ সাধারণ বিশ্বাস অনুযায়ী আচরণ করতে শুরু করলেন। সেখানে থেকে যেকেওন জিনিষের ক্ষেত্রে তার মধ্যে অস্বস্তিকর চিন্তা ও সন্দেহের জন্ম হয়, যেমনঃ ব্যক্তি বারবার চিন্তা করতে থাকে: “হয়তো আমার হাত এখনও পরিষ্কার হয়নি।”; “জীবাণু ঢুকে গেছে কিনা বুঝতে পারছি না।” এবং “আমি যদি এখনই না ধুই, তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটে যেতে পারে।”
এখানে দেখতে পাচ্ছি, অস্বস্তিকর চিন্তা তৈরি হচ্ছে – সেটা আমরা আবার ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেনঃ এই ধরণের চিন্তার যে কারোই আসতে পারে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই চিন্তাকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত দায়িত্ববোধ থেকে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে ফেলি। যেমন হাত পরিষ্কার হয়নি – এই চিন্তা তৈরি হতেই পারে কিন্তু যখন সেটাকে এভাবে ব্যখ্যা করি যে ” এর কারণে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়বে – তখনই আমরা ওসিডির চক্রে পরতে শুরু করি।
ভ্রান্ত ব্যখ্যা সম্পর্কে এবার এক্সপার্টের ভিডিও দেখে আসিঃ
বারবার মনোযোগ দেওয়ার প্রবণতা/ Attention reasoning: চলুন এবার দেখি, ভ্রান্ত ব্যখ্যা তৈরি হওয়ার ফলে কি হয়?
আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি তার ভ্রান্ত ব্যখ্যার ফলে ব্যক্তি বারবার সেই সম্পৃক্ত জিনিষের দিকেই বেশি মনোযোগ দিতে থাকেন। যেমনঃ যার নোংরা হওয়া নিয়ে ভয় থাকে সে তখন বারবার ময়লা, কাশি সে দিকেই বেশি মনোযোগ দেন। এই অপ্রয়োজনীয় মনোযোগের ফলে তার অস্বস্তিকর চিন্তা, ছবি ও সন্দেহ আরো চলতে থাকে!
এক্সপার্ট বলছেনঃ
অনুভূতিঃ ফলাফল হিসেবে ক্লায়েন্টদের অনুভূতিরও পরিবর্তন হয়ে শুরু করে। যেমন তাদের অস্বস্তি, অশান্তি এই ধরণের অনুভূতি তৈরি হয়। এই অশান্তির ফলে তার অস্বস্তিকর চিন্তা, ছবি, সন্দেহ আরো বেড়ে যেতে থাকে!
এক্সপার্ট বলছেনঃ
এড়িয়ে চলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ আচরণঃ ভ্রান্তব্যখ্যা থেকে ব্যক্তি তার চারপাশের জিনিষ বারবার মনোযোগ দিয়ে থাকেন, সেখান থেকে তার অস্থিরতা শুরু হয় ( অনুভূতির পরিবর্তন) হয় এবং সেখান থেকে মুক্তির জন্য সেইফটি বিহেভিয়র/ নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ আচরণ শুরু করে! (যেমনঃ হাত ধোঁয়া, প্রার্থনা)
এক্সপার্ট থেকে শুনিঃ
তাহলে এবার একসাথে দেখিঃ
এখানে দেখতে পাচ্ছি অতীতের ঘটনায় ছোটবেলায় “ময়লা” বা “অপরিষ্কার” হওয়ার জন্য অতিরিক্ত তিরস্কার পেতেন এবং বড় হওয়ার পর কোভিড-১৯ এর মহামারী তে নিজে ও পরিবার সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার (আকস্মিক ঘটনা)ফলে ব্যক্তির জীবনের নীতি / রুলস অফ লাইফ/ সাধারণ বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যেঃ “যেকোনো কিছু ছোঁয়ার পরে না ধুয়ে থাকলে জীবাণু ঢুকে যাবে” এবং “সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার না হলে, ততক্ষণ আমি নিরাপদ নই”! ধীরে ধীরে মধ্যে নানা ধরণের অস্বস্তিকর চিন্তা, ছবি, সন্দেহ তৈরি হতে শুরু করে যেমনঃ “হয়তো আমার হাত এখনও পরিষ্কার হয়নি।” তিনি এর ভ্রান্ত ব্যখ্যা ও মাত্রাতিরিক্ত দায়িত্ববোধ থেকে মনে করতে শুরু করলেন যে “হাত ধোয়ার পরেও যদি জীবাণু থেকে যায়?” বারবার মনোযোগ দেওয়ার প্রবণতাও বাড়তে থাকে যেমনঃ সবসময় লক্ষ্য করতে থাকেন কারো কাশি/হাঁচি, ময়লা, অপরিষ্কার টয়লেট, তার অনুভূতির পরিবর্তন হতে থাকে যেমনঃ অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, মন খারাপ। এই অনুভূতি থেকে সরানোর জন্য সেইফটি বিহেভিয়ার / নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ আচরণ করে ফেলে যেমনঃ Counterproductive behavior (অপ্রয়োজনীয় আচরণ) / Neutralizing Action (সংশোধন করাঃ হাত ধোয়া, চেক করা, প্রার্থনা, মনে মনে দোয়া পড়া, থুতু দেওয়া ইত্যাদি! – এখানে খেয়াল করি বারবার মনোযোগ দেওয়া, নেতিবাচক অনুভূতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং সেইফটি বিহেভিয়ার / নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ আচরণগুলো শুরু হচ্ছে ভ্রান্ত ব্যাখ্যার ফলেই এবং এর ফলেই অস্বস্তিকর চিন্তা, সন্দেহ, ছবি তার মাথায় আরো ঘুরতে থাকে!